বৃষ্টি ভেজা এক বিকেলের গল্প। ছোট্ট একটা শহরে, যেখানে প্রতিদিনের জীবন খুবই সাদামাটা। সেই শহরে তৃণা আর অর্ক একে অপরকে ভালোবেসেছিল। প্রথম দেখার পর থেকেই যেন তাদের দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত মায়া তৈরি হয়েছিল। তৃণার হাসি আর অর্কের চোখের গভীরতায় যেন এক চিরন্তন বন্ধন লুকিয়ে ছিল।
তারা প্রতিদিন বিকেলে নদীর ধারে বসে গল্প করত, ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনত। তৃণা বলত, “আমরা সারাজীবন এভাবেই থাকব, তাই না?” অর্ক হেসে মাথা নাড়াত, “অবশ্যই, তৃণা।” তাদের এই ভালোবাসার কথা পুরো শহর জানত। সবাই বলত, “ওরা একে অপরের জন্যই জন্মেছে।”
কিন্তু সুখের এই দিনগুলো খুব বেশিদিন টিকল না। হঠাৎ একদিন তৃণার পরিবার তার বিয়ের কথা ঠিক করল অন্য এক ছেলের সাথে। তৃণার পরিবার ভেবেছিল, সেই ছেলেটি তৃণাকে অনেক সুখে রাখবে, আর তার জন্য শহরের বাইরে ভালো একটি চাকরি করবে। তৃণার কিছু বলার ছিল না। পরিবারের চাপে সে অর্ককে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলো।
শেষবারের মতো নদীর ধারে দেখা হয়েছিল তাদের। তৃণার চোখে ছিল একরাশ কষ্ট, আর অর্কের চোখে অব্যক্ত প্রশ্ন—“কেন?” কিন্তু কেউ কোনো কথা বলল না। শুধু তৃণা বলেছিল, “ভুলে যাস আমাকে, তুই ভালো থাকিস।” সেই শব্দগুলো যেন অর্কের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে গেঁথে গেল।
তৃণা শহর ছেড়ে চলে গেল। অর্ক প্রতিদিন নদীর ধারে গিয়ে বসত, কিন্তু তৃণার সেই হাসি আর কখনো দেখতে পেত না। দিন যেতে লাগল, ঋতু বদলাতে থাকল, কিন্তু অর্কের মনে সেই নদীর ধারে বসে থাকা স্মৃতিগুলো রয়ে গেল। তৃণার ভালোবাসা তার জীবনে এক মিষ্টি স্বপ্ন ছিল, যা সে কোনোদিন পূরণ করতে পারল না।
কথিত আছে, অর্কের সেই নদীর ধারে গিয়ে বসা আজও থামেনি। সময় হয়তো চলে গেছে, কিন্তু তার হৃদয়ের সেই বেদনা আজও বয়ে বেড়ায়। তাদের ভালোবাসা এক অসম্পূর্ণ কবিতা হয়ে থেকে গেল, যা কেবল বৃষ্টির ফোঁটায় আর অর্কের একাকী চোখে ফুটে ওঠে।
0 Comments